গোয়াইনঘাট (সিলেট) সংবাদদাতা: সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প আহারকান্দি সেতু নির্মাণ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঐ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সেতুটি পূর্ণাঙ্গরূপ পেলেও মাত্র কয়েক বছরের মাথায় অবৈধভাবে বালু- উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি। যে কোনো মুহূর্তে সেতুটির বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। সেতুর নিচ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু- উত্তোলনের ফলে দুটি পিলার বাদে সব পিলারের ভূগর্ভস্থ অংশের চারপাশ আলগা হয়ে পড়েছে। সেতুর ওপর হালকা যান চলাচলেও মাত্রাতিরিক্ত ঝাঁকুনির সৃষ্টি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে বয়ে আসা পিয়াইন নদীর আহারকান্দি এলাকায় এলজিডির তত্ত্বাবধানে প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এর লক্ষ্য ছিল সিলেট জেলা সদরের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকা সোনারহাট ক্যাম্প ও মায়াবী ঝর্ণা সড়ক যোগাযোগ সহজকরণ ও দূরত্ব কমিয়ে আনা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আহারকান্দি সেতু উদ্বোধনের পর গোয়াইনঘাট সদর উপজেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি উত্তর সিলেটের-গোয়াইনঘাট- উপজেলার যোগাযোগ সহজতর হয়েছে। যোগাযোগ ও পর্যটন সম্ভাবনার উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায়ও নতুন সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা দেলোয়ার হোসেন গোয়াইনঘাট সদর ইউনিয়নের বর্তমান ওয়াড মেম্বার উনারা বড় ভাই স্বপন মিয়া ও ভাই ভাতিজাদের কে নিয়ে অবৈধভাবে বালু উওোলনের কারণে আরকান্দি সেতুর ও ফেনাইকোনা আমবাড়ি পনেরগ্রাম বাটিখাপা আশপাশ এলাকা ঝুঁকিতে পড়েছে। তারা সেতুর নিচ ও আসপাশে থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে উত্তোলন করছে বালু-। এতে করে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে সেতু সহ আশপাশ এলাকা ।
সরজমিনে আহারকান্দে নদী ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিলিন্ডার মেশিন দিয়ে আহারকান্দি নদীর তলদেশের ৮০/১০০ ফুট গভীর থেকে তোলা হচ্ছে বালু। ভয়ংকর এ মেশিনগুলো মাটির ওপরের অংশ ভেদ করে নিচ থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে দিনদিন হুমকির মুখে পড়ছে আহারকান্দি সেতুসহ আশপাশের এলাকা। বোমা মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে বালু-পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখায় এরই মধ্যে সেতুটির প্রধান দুটি পিলার ছাড়া সব পিলারের ভূগর্ভস্থ অংশ আলগা হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সেতুর ওপর দিয়ে যে কোনো ধরনের হালকা যান চলাচল করলে বড় ধরনের ঝাঁকুনির সৃষ্টি হচ্ছে। তাই যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা হতে পারে।
আমবাড়ি থেকে স্কুলপড়ুয়া শিশুরা এখন ক্লাসে যেতে ভয় পায়, কারণ নদীপাড়ের রাস্তা যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে, কারণ বালু উত্তোলনের আওয়াজে ক্লাস চালানোই যাচ্ছে না ঠিকমতো।
স্থানীয়রা জানান, একটি চক্র গত মে মাসের পর থেকেই ইসিএভুক্ত এলাকা আহারকান্দি , পিয়াইন নদীর উৎসমুখ হাজীপুর লাঠি নদী ও আহারকান্দি সেতু হয়ে সেনাইকোনা আমবাড়ি মাটি খাপা পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু- উত্তোলন করছে। এতে মাঝেমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হলেও অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পর সেই আগের রূপ ফিরে পায় আহারকান্দি নদী।
সেতু দিয়ে চলাচলকারী স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, যারা বালু- উত্তোলন করছে, তারা খুব প্রভাবশালী হওয়ার কারণে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা এ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে সেতু ও আশপাশের বাড়িঘর যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
সিলেট সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সালাহ উদ্দিন সোহাগ বলেন, আহারকান্দি সেতুর নিচ থেকে বালু- উত্তোলন করলে সেতুটি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দুর্বল হয়ে পড়বে। সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়বে। শীঘ্রই সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।